দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আরেকজন দীপ্তিমান যাদুকর আবির্ভূত হলেনঃ বাঙালী প্রতুলচন্দ্র সরকার (পি সি সরকার সিনিয়র) । প্রাচ্যের সর্বশ্রেষ্ঠ যাদুকর রূপে খ্যাতি লাভ করে ১৯৫৫ সালের মধ্যেই তিনি পাশ্চাত্য জগতেরও অনুরূপ সাফল্যের জন্য তৈরী হলেন, পৃথিবীর সেরা জাদুকর বলে যাঁরা দাবী করেন , তাদের সবাইকে চ্যালেঞ্জ জানাতে।
একটি প্রদর্শনেই সরকার রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে উঠলেন
, সরকার নামটি ঘরে ঘরে পরিচিত হল, আর ইউরোপে তাঁর সাফল্য নিশ্চিত হয়ে গেলো।
ব্যাপারটি ঘটেছিলো ইংলন্ডের বি বি সি টেলিভিশন প্রোগ্রামে। তারিখ এপ্রিল ৯, ১৯৫৬ । সরকার তাঁর নিজস্ব ভঙ্গিতে দেখালেন করাত দিয়ে তরুনীকে দ্বিখন্ডিত করার খেলা।
টেলিভিশন ক্যামেরাটি তাদের মুখোমুখি আর কাছাকাছি হতেই সরকার তার শায়িতা সহকারিনীর কটিদেশ ভেদ করে বিদ্যুত চালিত চক্র করাতটি চালিয়ে দিলেন দৃশ্যত মেয়েটির দেহ দ্বিখণ্ডিত করে । তারপর দেহের মাঝামাঝি ঐ কাটা অংশের ফাঁকে নাটকিও ভাবে একটি ধাতুর তৈরী পাত খাড়া ভাবে চেপে দিলেন। সরকার সোজা ক্যামেরার লেন্সের দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষন থমকে রইলেন , যাতে পরিস্থিতিটার পুরো প্রভাব পড়ে দর্শকদের মনে। ঠিক যথোচিত মুহূর্তে ধাতুর পাতটি তুলে নিয়ে সরকার মেয়েটির হাত দুটি ঘষে তাকে জেগে ওঠার আদেশ দিলেন । কিন্তু মেয়েটি নিশ্চল অসাড় ভাবেই শুয়ে রইলো, আর তাই দেখে ইংলন্ডের হাজার হাজার টেলিভিশন দর্শকবৃন্দ আতঙ্কে শিহরিত হলেন।
ঠিক পরমুহূর্তেই এই অনুষ্ঠান টির সময়সীমা পার হয়ে গেলো । সঙ্গে সঙ্গে টেলিভিশনের ক্যামেরাটি ঘুরে গিয়ে ফোকাস করলো অনুষ্ঠান পরিচালকের দিকে। যিনি দর্শকদের জানালেন 'শুভরাত্রি' ।
কয়েক মিনিটের মধ্যেই টেলিভিশন কেন্দ্রে আসতে শুরু করলো দর্শকদের টেলিফোনের পর টেলিফোন । তাঁদের ভীষণ উদ্বেগ হয়েছিলো মেয়েটি হয়তো মারা গেছে।
সরকারের এই টেলিভিশন অনুষ্ঠানটি তাঁর তীক্ষ্ণ বুদ্ধি, অভিনয়-দক্ষতা, প্রচারের উদ্দেশ্যে নাটকীয় শিহরন সৃষ্টির এবং উৎকন্ঠ কৌতুহল জাগাবার একটি চমৎকার উদাহরন ।
এই খেলাটি পি সি সরকারের নিজের আবিষ্কৃত নয়, বিদেশী যাদুকরের আবিষ্কৃত খেলা, এবং প্রত্যেকটি
উল্লেখযোগ্য বিদেশী যাদুকরই এই খেলাটি দেখিয়ে থাকেন। এই বিদেশী খেলাটি বিদেশে বিদেশী দর্শকদের দেখিয়ে বাজিমাত করতে
হলে তার প্রদর্শনে এমন কিছু অসাধারন অভাবনীয় বিশেষত্ব রাখতেই হবে যা দেখে বিদেশী দর্শকদের তাক লেগে যাবে, তাঁরা
বিঝতে পারবেন এই ভারতীয় যাদুকর টি আমাদের সব যাদুকর দের থেকে আলাদা।
এই খেলাটি প্রদর্শনে বিদেশী বিরাট যাদুকরেরা কি করতেন? করাত দিয়ে সহকারীনী কে কেটে দু-টুকরো করে তারপরেই
দর্শকদের উদ্বেগ দূর করে নিশ্চিত করে দিতেন কাটা মেয়েটিকে আবার আস্ত বা জীবন্ত দেখিয়ে। দর্শকদের উৎকন্ঠা সেখানেই
চুকে যেতো। কিন্তু সেই টেলিভিশন প্রদর্শনী তে সরকার সেই মামুলি পন্থা নেন নি। তিনি সযত্নে সময়ের হিসাব রেখেছিলেন,
এবং সহকারিনীকে আগেই বলে রেখেছিলেন যে " আমি যখন তোমার হাত ঘষতে ঘষতে তোমাকে উঠে পড়ার আদেশ করব,
তুমি তখন না উঠে মাড়ার মত অসাড় হয়ে শুয়ে থাকবে। তারপর আমাদের পালার সময়সীমার শেষ হয়ে গিয়ে টি ভি
ক্যামেরার চোখ অন্য দিকে ঘুরে গেলে যখন আমরা টি ভি দর্শক দের চোখের আড়াল হয়ে যাব, তখন তোমাকে জানাবো আর
তুমি উঠে পড়বে। আর দর্শকরা ভেবে মরবে তোমাকে আমি আবার আস্ত করতে পেরেছি কিনা।"
(তথ্যসূত্রঃ 'যাদু কাহিনী' বই )
No comments:
Post a Comment