[ প্রাচীন কাল থেকেই ভারতে 'নবগ্রহ' কথাটি প্রচলিত ।অর্থাৎ, সৌরজগতে গ্রহের সংখ্যা ৯, তখন তো ইউরেনাস ,নেপচুন ও প্লুটো আবিষ্কৃত হয়নি ।তাহলে এই সিদ্ধান্তে প্রাচীন ভারতীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা কিভাবে উপনীত হয়েছিল ? ]
প্রাচীন ভারতীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা ইউরেনাস
, নেপচুন বা প্লুটো গ্রহের অস্তিত্ব সম্পর্কে অবশ্যই অবহিত ছিলেন না। এমনকি পৃথিবীও ওদের কাছে গ্রহ বলে স্বীকৃত ছিল না। একথা গ্রিস প্রভৃতি অন্যান্য প্রাচীন সভ্য দেশগুলো সম্পর্কেও প্রযোজ্য ।
সেই হিসাবে প্রাচীনকালের গ্রহ তালিকায় শুক্র ,মঙ্গল, বৃহস্পতি এবং শনি এই পাঁচটি গ্রহেরই শুধু স্থান হওয়ার কথা। কিন্তু যখন গ্রহ শব্দটি ছিল কিছুটা ভিন্ন ।গভীর প্রকৃতিগত পার্থক্য অনুধাবন করতে অক্ষম সেযুগের জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা কতগুলো বাহ্য বা অপ্রধান লক্ষণ এর সাহায্যে গ্রহ চিহ্নিত করতেন । জ্যোতিষ্ক বিচারে সেযুগের জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের প্রধান মানদন্ড ছিল স্থিরতা বা অস্থিরতা ।
ওদের ধারনা ছিলো তারারা আকাশে আপেক্ষিকভাবে স্থির । কিন্তু ওই ভাবে গড়ে ওঠা স্থির পটভূমিতে গ্রহরা ভ্রাম্যমান। আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের দৃষ্টিতেও কথাটা গ্রহদের সম্পর্কে সত্য বটে কিন্তু ভ্রাম্যমান হয়েও একটি জ্যোতিস্ক গ্রহ নাও হতে পারে ।এর খুব সহজ দৃষ্টান্ত হলো সূর্য ,চন্দ্র ,ধূমকেতু এবং উল্কা । ধুমকেতু এবং উল্কা, এদের অবশ্য আর সবকিছুই অন্যরকম তাই ওদের বাদ দেওয়া হয়েছিল । কিন্তু সূর্য এবং চন্দ্র কে প্রাচীন ভারতবর্ষে গ্রহ বলে গণ্য করা হতো। একই ঘটনা প্রাচীন গ্রিসের ঘটেছে।
কিন্তু তবু প্রশ্ন থেকে যায় বুধ ,শুক্র ,মঙ্গল ,বৃহস্পতি এবং শনির সঙ্গে সূর্য ও চন্দ্রকে যুক্ত করলে সংখ্যাটা ৭এ দাঁড়ায় ৯ তো হয়না । আরো দুটি গ্রহ ভারতীয়রা পেলেন কোথা থেকে? প্রাচীন ভারতের আরো দুই তথাকথিত গ্রহ হল 'রাহু' আর 'কেতু'। রাহু ,কেতু আসলে কোন গ্রহ তো নয়ই এমনকি ওরা বাস্তব অস্তিত্ব সম্পন্ন কোন জ্যোতিস্কও না। প্রকৃতপক্ষে রাহু ও কেতু দুটি জ্যামিতিক বিন্দু । চন্দ্রের গতিপথে বিন্দু দুটি অবস্থিত । এদের দেখার কোন প্রশ্ন ওঠেনা । গণনা করে এদের অবস্থান নির্ণয় করতে হয় । রাহু ও কেতু কিন্তু স্থির নয়। তারাদের সঙ্গে তুলনা করলে এদের অবস্থান ধীরে ধীরে পরিবর্তনশীল সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণ সংক্রান্ত নানা গণনায় রাহু কেতুর অবস্থান নির্ণয়ের বিশেষ প্রয়োজন হয়। প্রাচীন ভারতীয় জোতির্বিজ্ঞানীরা গুরুত্বপূর্ণ ওই বিন্দু দুটিকে গ্রহের মর্যাদা দিয়েছিল ।তাই তাদের তালিকায়' গ্রহ নটি। পাঁচটি প্রকৃত গ্রহ ,একটি তারা ,একটি উপগ্রহ এবং দুটি কল্পিত গ্রহ ।
ভারতীয় নবগ্রহের ধারণা অতএব কোন রহস্যময় ঘটনা নয় এক বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি প্রসূত সমাপতন (কোইন্সিডেন্স) এর ঘটনা মাত্র ।
তথ্যসূত্র: বই- বিজ্ঞান যখন ভাবায় ।
No comments:
Post a Comment