পাখিরা ডানা মেলে নীল আকাশের গায়ে অনায়াসে উড়ে চলে। তাদের এই আকাশে ওড়ার দৃশ্য আদি অনন্তকাল থেকেই মানুষের মনে বিস্ময়ের সঞ্চার করে আসছে । উড্ডীয়মান পাখীদের দিকে তাকিয়ে অসহায় মানুষ দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভেবেছে,আমিও যদি এমনি করে আকাশে বেড়াতে পারতাম! গ্রীক সভ্যতা অতি প্রাচীন। সেখানকার জ্ঞানী-গুণীজন নিষ্ঠা, ধৈর্য ও অধ্যবসায় সম্বল করে তাঁদের অনন্য প্রতিভার স্ফূরণ ঘটিয়ে নিত্য নতুন আবিষ্কারের
মাধ্যমে কেবলমাত্র নিজের দেশকেই নয়, সমগ্র পথিবীকে নানাদিক থেকে সমৃদ্ধ করে তুলেছেন। আর পথিবীবাসীকে প্রেরণা যুগিয়েছেন গবেষণার মাধ্যমে নতুন নতুন আবিষ্কারে ব্রতী হতে। ইতিহাস পর্যালােচনা করলে দেখা যায় পাখীর মত আকাশে ওড়ার চিন্তা সর্বপ্রথম গ্রীকবাসীদের মনেই এসেছিল। সুপ্রাচীন গ্রীক পুরাণে পাখীর মত ডানা মেলে আকাশে ওড়ার প্রবণতার উল্লেখ পাওয়া যায়। ইকারাস
নামে দ্বীপবাসী এক বালকের মনে আকাশে ওড়ার অভিলাষ জাগে। সে দ্বীপের পাথরের ওপর বসে, উত্তাল-উদ্দাম নীল সমদ্রকে সামনে রেখে দূরগামী পাখীদের দিকে তাকিয়ে তন্ময় হয়ে ভাবত, আমার যদি দুটো ডানা থাকত তবে দুর দেশে পাড়ি জমাতে পারতাম। মন-প্রাণ ভরে দেখতে পেতাম পৃথিবীর অপূর্ব সৌন্দর্যরাশি। কী মজাই না হত! তার এই উচ্চাভিলাষের কথা বালকটি তার বুড়াে বাবাকে বলল। ছেলের কথা শুনে তার বাবা কথাটিকে নিছকই বালক মনের খেয়াল বলে উড়িয়ে দিল। কিন্তু ছেলেটি নাছােড়বান্দা। সে
বার বার বাবাকে বলতে লাগল—আমায় দুটো ডানা লাগিয়ে দাও। আমি পাখীর মত উড়ে পথিবী দেখতে যাব। তবু তার বাবা একথা-সেকথা বলে তার কথাটিকে চাপা দিতে চেষ্টা করল। কিন্তু ভবি ভুলবার নয়।ইকারাস আবারও বল—'বাবা,। দুটো ডানা লাগিয়ে দাও, আমি পথিবীর অপূর্ব সৌন্দর্য রাশি দেখতে যাব। বড়াে এবার বুঝল, এটি ইকারাস-এর বালক মনের নিছকই খেয়াল মাত্র নয়। তার মনে যে অত্যুগ্র আগ্রহ জেগেছে তাকে সহজে নিবৃত্ত করা যাবে না। তাই নিতান্ত অনন্যোপায় হয়েই কিছু পাখির পালক জোগাড় করে আনলো । তারপর মোম আর পালকগুলি দিয়ে তৈরী করে ফেলল চমৎকার দটো ডানা । বুড়ো এবার বালক ইকারাস’কে নিয়ে উঠল পাহাড়ের সর্বোচ্চ চূড়ায়। লতা জড়িয়ে জড়িয়ে ডানা দুটোকে তার হাত দুটোতে বেধে দিল। বুড়ো এবার একমাত্র ছেলেকে পাহাড়ের চূড়া থেকে দিল শূন্যে ছেড়ে। ইকারাস পাখীর মত ডানা দুটো মেলে, বাতাস কেটে কেটে মনের আনন্দে দিব্যি উড়ে চলল। বুড়াে চীৎকার করে ছেলেকে বলল-'বেশি উপরে যাস নে যেন। ' ইকারাস-এর মনে তখন পথিবীকে দেখার অফুরন্ত উৎসাহ উদ্দীপনা। ভুলে গেল বাবার সতর্কবাণী! ওপরে, অনেক ওপরে উড়ে যেতে লাগল। মোম গলতে শুরু করল। একটি একটি করে পালক খসে পড়তে লাগল সমদ্রের জলে এক সময় বালক ইকারাসও হুমড়ি খেয়ে পড়ল উত্তাল উদ্দাম সমুদ্রে। ইকারাস নিজের জীবন দিয়ে বিশ্ববাসীর মনে আকাশে ওড়ার প্রেরণা যুগিয়ে গেল। সেই থেকে ওই সমুদ্রের নাম হয় 'ইকেরিয়ান সী'।
লেখাটা হয়তো পুরান বা রূপকথার কিন্তু বিজ্ঞান বারবারই নানা রূপকথাকে বাস্তবায়িত করছে বা বাস্তবায়নের উৎসাহ জুগিয়েছে এবং কল্পনাকে বাস্তবতা প্রদানই কিছু অর্থে বিজ্ঞান তাই না ...
No comments:
Post a Comment