রূপকথার গল্পে আর প্রাচীন রাজ রাজাদের গল্পেও মণিমাণিক্য রত্ন এসবের কথা বহুল প্রচলিত । রত্ন ছিল অভিজাত্যের প্রতীক । সেই রত্ন সমূহের মধ্যে হীরা অন্যতম আর ভারতবর্ষে হীরার কথা উঠলে যে নামটি আমাদের মনে সর্বপ্রথম ভেসে ওঠে তা হল কোহিনুর হীরা ।
এই কোহিনুর হীরার ঐতিহ্য ও মূল্য এতটাই বেশি ছিল যে সময়ের সাথে সাথে তা ভারতবর্ষের ইতিহাসে নানা সম্রাটের নানা স্মৃতি-বিজড়িত করেছে । এবং সময়ের সাথে সাথে নানা শাসক গোষ্ঠীর মধ্যমে পরিভ্রমণ করেছে এক দেশ থেকে অন্য দেশ , কখনো উপহার স্বরূপ কখনো অধিকার অর্জন বা কখনো লুটের মাধ্যমে । এবং সাথে পরিবর্তন এসেছে নানা সময়ে নানাভাবে কিন্তু কালের বহনে তা হারিয়ে যায়নি।
তো কোথায় প্রথম পাওয়া গিয়েছিল কোহিনুর হীরা ? এ বিষয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদ আছে , আর তা থাকাটাই স্বাভাবিক বহু প্রাচীন কালের সাথে যুক্ত যে এই হীরার উৎস সেক্ষেত্রে তো মতভেদ থাকবেই । কেউ মনে করে এটি দক্ষিণ ভারতের কৃষ্ণা নদীর তীরবর্তী কলুর নামে কোন এক জায়গা থেকে পাওয়া আবার কেউ মনে করেন কৃষ্ণা নয়, এটি গোদাবরী নদীর তীরবর্তী মসলিপত্তম থেকে পাওয়া । তবে একটা কথা এক্ষেত্রে পরিষ্কার কোহিনুর হীরা উৎসস্থল দক্ষিণ ভারতের কোন একটি জায়গা কোন একটি খনি । মনে করা হয় এই হীরক সম্পদ অনেকদিন মালব রাজাদের রত্নভান্ডার এ স্থান করেছিল । যদিও এই হীরক রত্নের নাম তখন কোহিনুর ছিলনা । যার নাম দেয়া হয়েছে পরবর্তীকালে । পাল্টাতে থাকে ভারতের ইতিহাস । একের পর এক শাসকগোষ্ঠী সাম্রাজ্য স্থাপন করতে থাকে আর এদিকে সেই রত্ন হস্তান্তরিত হতে থাকে এক শাসক থেকে অন্য শাসকদের কাছে । এভাবেই মোগলদের কাছে এসে যায় এই সম্পদ । এরপর ভারত আক্রমণ করেন নাদির শাহ । নাদির শাহ সাম্রাজ্য স্থাপনের জন্য ভারত আক্রমণ করেন নি ভারতের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নানা ঐতিহ্যবাহী ও মূল্যবান ধন-সম্পদ রত্ন ভান্ডার লুট করাই ছিল তার প্রকৃত উদ্দেশ্য । তার মধ্যে অন্যতম এই বহুমূল্যবান হীরকটি । মোগল দের কাছ থেকে সেই হীরক এসে পৌঁছল পারস্য সম্রাট নাদির শাহের হাতে ।স্বমহিমায় উজ্জ্বল দ্যুতি নিয়ে জ্বলজ্বল করছিলো রত্ন টি । স্বপ্নের রত্ন হাতে পেয়ে বিস্মৃত নাদির শাহ তার ভাষায় বলে উঠলেন 'কোহিনুর' যার বাংলা অর্থ আলোর পাহাড় । তারপর থেকেই এই রত্ন কোহিনুর নাম নিলো । কিন্তু কহিনুরের অভিযান যে তখনও অনেক বাকি । নাদির শাহের মৃত্যুর পর নানা অন্তর্বর্তী ঐতিহাসিক ঘটনার মধ্যদিয়ে কোহিনুর চলে যায় আফগানদের কাছে । সেখান থেকে আবার ভারতে ফিরে আসে স্থান পায় শিখ সাম্রাজ্যে । এসবের মধ্যেই ভারতের ইতিহাসে ঘটে গেছে বহু পদ পবিবর্তন ইস্টইন্ডিয়া কোম্পানি বাণিজ্য করতে এসে ইতিমধ্যেই সমগ্র ভারতে সাম্রাজ্য স্থাপনে অনেকটাই অগ্রণী । পঞ্জাবের মহারাজা রঞ্জিত সিংহ আফগান শাসকের থেকে কোহিনুর পেয়েছিলেন। তিনি তা উইল করে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরকে দিয়ে যান। কিন্তু তাঁর উত্তরসূরি দলীপ সিংহ ১৮৫০ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাতে এ’টি তুলে দেন। ১৮৫০-এ দলীপ সিংহ ছিলেন নাবালক। দ্বিতীয় ব্রিটিশ-শিখ যুদ্ধের পর শিখদের হারিয়ে ব্রিটিশরা শিখ সাম্রাজ্য দখল করে। তার জন্য লর্ড ডালহৌসি লাহরের শেষ চুক্তি তৈরি করেন। সেই চুক্তিতেই কোহিনুর-সহ মহারাজার যাবতীয় সম্পত্তি ইংল্যান্ডের মহারানি ভিক্টোরিয়াকে সমর্পণের কথা বলা হয়েছিল।
হলোও তাই কোহিনুর পৌঁছলো রানী ভিক্টরিয়ার কাছে ।মাঝে মাঝেই হীরা কে বিশেষ পদ্ধিতিতে কেটে তার উজ্জ্বলতা বাড়ানো হয় । রানীও দক্ষ কারিগর ডেকে সেই হিরাকে কাটালেন পূর্বের ২৮০ ক্যারেটের কোহিনুর পরিণত হলো ১০৯ ক্যারেটে । তারপর থেকে কোহিনুর স্থান করে নিয়েছে ইংল্যান্ডের রানীর মুকুটে ।
No comments:
Post a Comment